Ramadhan

রমজানে শাহ কুতুব উদ্দীন রহ.-এর অবস্থা

আল্লাহর ওলিদের জীবনধারা সবসময়ই সাধারণ মানুষের কাছে এক অনন্য প্রেরণা। তাঁদের প্রতিটি কাজ, ইবাদত ও জীবনযাপন থেকে মুমিন সমাজ পেয়ে থাকে পথনির্দেশনা ও শিক্ষা। বাহরুল উলূম শাহ কুতুব উদ্দীন রহ. ছিলেন এমনই এক মহান আল্লাহর অলি, যাঁর রমজানের জীবনযাত্রা ছিল পূর্ণ আধ্যাত্মিকতার আলোকরেখায় ভরপুর। এ মাসে তাঁর অবস্থা ছিল অন্য সময়ের তুলনায় অনেক গভীর, আল্লাহর নৈকট্য লাভের তীব্র তৃষ্ণায় পূর্ণ।

সাহরি দিনের সূচনা

রমজান মাসে শাহ কুতুব উদ্দীন রহ.-এর সাহরি ছিল অত্যন্ত সাধারণ ও সংক্ষিপ্ত। তিনি অধিকাংশ সময় এক গ্লাস পানি, সামান্য ভাত কিংবা রুটি খেয়ে সাহরি করতেন। তিনি বলতেন—সাহরি শুধু শরীরের জন্য নয়, বরং ইবাদতে শক্তি অর্জনের জন্য। সাহরির পরই তিনি লম্বা কায়েমুল লাইল বা তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। এই নামাজে তাঁর কান্না ও আরজি ছিল হৃদয় বিদারক। উপস্থিত মুরিদরা অনেক সময় বলতেন, তাঁর দোয়ার শব্দ যেন আসমান পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

ফজরের পর সকালবেলার আমল

ফজরের নামাজের পর তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। রমজানের প্রায় প্রতিটি দিনে তিনি কয়েক খতম কুরআন সম্পন্ন করতেন। এছাড়া তিনি মুরিদ-মাশায়েখদের নিয়ে বসে দিকনির্দেশনা দিতেন, তরীকতের আলোচনায় যুক্ত হতেন। এ সময় তাঁর মুখমণ্ডল ছিল প্রশান্তি ও নূরের আলোয় উদ্ভাসিত, যা দেখে সবার মনে হতো তিনি যেন সত্যিই আল্লাহর এক বিশেষ সান্নিধ্যে আছেন।

দুপুর বিকেল

দুপুরের সময় তিনি হাল্কা বিশ্রাম নিতেন, আসরের নামাযের আগে নির্জনে জিকিরে লিপ্ত থাকতেন। আবার কখনো ধ্যানমগ্ন হয়ে কুরআনের আয়াত সমূহের গভীর ব্যাখ্যা দিতেন। বিকেলের দিকে তিনি দরবারে উপস্থিত মানুষদের সঙ্গে বসতেন। গরীব-দুঃখী, অভাবী কিংবা সমস্যাগ্রস্ত মানুষ এলে তিনি তাঁদের সাহায্য করতেন এবং বলতেন—রমজান হচ্ছে দয়া দানশীলতার মাস; এখানে দান করলে পুরস্কার বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তাঁর দানশীলতার ফলে দরবারে আসা কেউ খালি হাতে ফিরত না।

ইফতার রাতের আমল

মাগরিবের সময় তাঁর দরবারে যেন ঈদের মতো পরিবেশ সৃষ্টি হতো। অসংখ্য মানুষ তাঁর সঙ্গে বসে ইফতার করত। তিনি খুবই সাধারণ খাবার গ্রহণ করতেন—খেজুর, পানি ও সামান্য ভাত-ডাল। অথচ তাঁর সামনে থাকত মুরিদদের নিয়ে আসা নানা প্রকার খাবার, যা তিনি অন্যদের খেতে দিতেন।

ইফতারের পর এশা ও তারাবির নামাজে তিনি উপস্থিত থাকতেন। বয়সের ভারে ক্লান্ত দেহ নিয়ে হাফেজদের দীর্ঘ কিরাআত, সুন্দর তিলাওয়াত ও গভীর মনোযোগে শুনতেন, জামাতে নামায পড়তেন, তার আলোচনা শুনতে মানুষের ঢল নামত। রাতের শেষভাগে তিনি আবার তাহাজ্জুদে দাঁড়াতেন, আর তখন তাঁর চোখের পানি ভিজিয়ে দিত জায়নামাজ। এরপরেই যিকির করতেন মুরীদদের সাথে নিয়ে।

আধ্যাত্মিক প্রভাব

রমজানে তাঁর অবস্থা ছিল যেন রাহমতের বৃষ্টি। যে-ই তাঁর কাছে আসত, সে অনুভব করত এক প্রশান্তির ছোঁয়া। মুরিদরা বলতেন, তাঁর সঙ্গে একবার বসলে ইবাদতের প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যেত, গুনাহ থেকে ফিরে আসার শক্তি মিলত। তিনি সবসময় স্মরণ করাতেন—রমজান শুধু ক্ষুধাপিপাসা সহ্য করার নাম নয়, বরং আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করার মাস।

উপসংহার

রমজানে বাহরুল উলূম শাহ কুতুব উদ্দীন রহ.-এর জীবন ছিল আল্লাহভীতির এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। তাঁর ইবাদত, দানশীলতা, জিকির ও আত্মসংযম আজও মুরিদ-মুহিব্বীনদের হৃদয়ে প্রেরণা জাগায়। তাঁর রমজানের অবস্থা যেন আমাদের জন্য এক মহামূল্যবান শিক্ষা—এই মাসকে কেবল রীতি নয়, বরং আধ্যাত্মিক উন্নতির সোপান হিসেবে গ্রহণ করা।