বাহরুল উলূম হযরত আলহাজ্ব শাহ্ মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দীন,
পীর ছাহেব কেবলা, বায়তুশ শরফ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী
- নাম : মাওলানা মুহাম্মদ কুতুব উদ্দীন
- পিতার নাম : মরহুম মাওলানা মুছলেহ্ উদ্দীন (মৃত্যু ১৯৫৯)
- মাতার নাম : মুছাম্মাৎ রায়হানা বেগম (মৃত্যু ১২ ফেব্রুয়ারী ১৯৯০ ইং, সোমবার)
- জন্ম তারিখ : ১লা জানুয়ারী ১৯৪২ইং
- স্থায়ী নিবাস : গ্রাম- সূফী মিয়াজীপাড়া, ডাক- আধুনগর, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।
- বর্তমান ঠিকানা : বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স, ধনিয়ালাপাড়া, ডিটি রোড, চট্টগ্রাম।
- প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা :
- ঐতিহ্যবাহী চুনতী হাকিমিয়া আলীয়া মাদরাসা হতে ১৯৫৩ সালে দাখিল- ২য় বিভাগ ও ১৯৫৫ সালে আলিম- ১ম বিভাগ (মেধা তালিকায় ১৫শ তম স্থান) এবং ১৯৫৭ সালে ফাজিল- ১ম বিভাগ (মেধা তালিকায় ৫ম তম স্থান) এবং শতাব্দীর প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম আলীয়া মাদরাসা হতে ১৯৫৯ সালে কামিল ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অর্জন করে ‘ইস্ট পাকিস্তান মাদরাসা এডুকেশন বোর্ড’ কর্তৃক প্রদত্ত ‘গোল্ড মেডেল’ লাভ করেন।
- শিক্ষাগত ব্যুৎপত্তি অর্জন : এছাড়াও কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিকাহ্, উসূলে ফিকাহ্, বালাগাত, মানতিক, ইলমুল কালাম, আরবী ভাষা ও সাহিত্য এবং তাসাউফ শাস্ত্রের উপর উচ্চতর জ্ঞান অর্জন করেন।
- সাংস্কৃতিক দক্ষতা অর্জন : তিনি উর্দূ, ফার্সী, আরবী কবিতা রচনায় সমকালীন যুগে শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন। একাধারে কবিতা ও নাত গযল আবৃত্তিতে পরিবেশনায় অসাধারণ পারদর্শী।
- ভাষাগত দক্ষতা অর্জন : তিনি অনর্গল আরবী, উর্দূ, ফার্সী ভাষায় কথা বলতে পারেন।
- বৈবাহিক জীবন : ১৯৬১ সালে সাতকানিয়া রূপকানিয়া নিবাসী হাকীম মাওলানা শফিক আহমদের জৈষ্ঠ্য কন্যা মুহতরমা তাহেরা বেগমের সাথে প্রণয় সূত্রে আবদ্ধ হন।
- সন্তান-সন্ততি : ১ পুত্র ও ৬ কন্যা সন্তানের জনক।
- পেশা : দীর্ঘ ৫১ (একান্ন) বৎসর শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া অধ্যক্ষ, মুহাদ্দিস, ইমাম ও খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
- প্রশিক্ষণ : বাংলদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থেকে তিনি সফলতার সাথে ১৯৯৫ সনে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন।
- পুরস্কার/পদক/সার্টিফিকেট : তাঁর প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, প্রত্যুৎপন্নমতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের কারণে এবং সামাজিক কর্মকান্ডে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় তিনি বিভিন্ন সময়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। তাঁর বাগ্মীতা, সাবলীল বাচনভঙ্গী, দৃষ্টিনন্দন সর্বজন স্বীকৃত।
- ১৯৯৮ সালে তিনি চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অধিদপ্ত থেকে জেলার “শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান” হিসাবে পুরস্কার লাভ করে বিরল সম্মানের অধিকারী হন।
- সমাজ কল্যাণের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য চট্টগ্রাম সমাজ কল্যাণ পরিষদ কর্তৃক “শ্রেষ্ঠ সমাজসেবী স্বর্ণপদক -৯৮” লাভে ধন্য হন।
- শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ : ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান (অধ্যক্ষ)’ -এর ‘জাতীয় পুরস্কার’। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং ২০০০ সালে তাঁকে ‘স্বর্ণ পদকে’ ভূষিত করেন। তাঁর অধ্যক্ষ্য থাকাকালীন সময়ে মাদরাসা দুই বার জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়।
- ওয়ায়েজ : সুদীর্ঘ ৬০ বৎসর যাবত উম্মতের একজন শ্রেষ্ঠ ওয়ায়েজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
- ক্রেস্ট ও মানপত্র লাভ : এ পর্যন্ত পাঁচ শতেরও অধিক পুরস্কার, মানপত্র ও ক্রেস্ট লাভ করেন।
- পীর মুর্শীদ : কুতুবুল আলম শাহ্ সূফী হযরত মাওলানা মীর মুহাম্মদ আখতর (রাহ. মৃত্যু ১৯৭১) ও
- হাদিয়ে যমান হযরত শাহ্ সূফী মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জব্বার (রাহ. মৃত্যু ১৯৯৮ইং)।
- বায়আত : চুনতী মাদ্রাসায় পঞ্জুম (বর্তমান ১০ম শ্রেণী) শ্রেণীর ছাত্র থাকাবস্থায় (১৯৫২) তখন কুমিরাঘোনা মাহফিলে ঈছালে ছাওয়াবের সময় কলাউজানের কারী নুরুল হুসাইনের (বর্তমানে মৃত) (চুনতী মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, ছাত্র জীবনে আমাদের বাড়িতে জায়গীর ছিলেন, এখনো আছেন) মাধ্যমে হযরত কেবলা (রাহ.)-এর পবিত্র হস্ত মোবারকে বায়আত হন।
- পীর-মুর্শীদের একান্ত সান্নিধ্য : সুদীর্ঘ ২৮ বছর (১৯৬৯-১৯৯৭ইং)।
- খেলাফত লাভ: ১৯৯৮ সালের ২৫ মার্চ হাদিয়ে যামান (যুগের সংস্কারক) শাহ সূফী হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার ছাহেব (রাহ.)-এর ইন্তেকালের পর এ বিশাল দরবারের দায়িত্বভার তাঁর স্কন্ধে অর্পিত হয়। তিনি তা দৃঢ় আস্থার সাথে ধারণ করেন।
- তিনি যে সব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত (পদবীসহ) :
- (১) সভাপতি- আনজুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশে (জাতীয় পর্যায়ে নিবন্ধনকৃত মসজিদ ভিত্তিক মানব কল্যাণ সংগঠন), (২) সভাপতি- বায়তুশ শরফ ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠান, (৩) সভাপতি- আনজুমনে নওজোয়ান বাংলাদেশ, (৪) চেয়ারম্যান- বায়তুশ শরফ ফাউন্ডেশন, (৫) সভাপতি মজলিসুল উলামা বাংলাদেশ, (৬) সদস্য- আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যায় ট্রাস্টি বোর্ড, চট্টগ্রাম। (৭) চেয়ারম্যান শরীয়াহ্ বোর্ড- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লি., (৮) সহ সভাপতি- চুনতি হাকিমিয়া আলিয়া মাদরাসা, (৯) সহ সভাপতি- লোহাগাড়া আধুনগর ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা, (১০) সভাপতি- বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া এতিমখানা, (১১) সভাপতি- সূফী মিয়াজী পাড়া ফোরকানিয়া মাদরাসা কমিটি, (১২) সভাপতি- আখতরাবাদ কুমিরাঘোনা আখতরুল উলূম মাদরাসা, লোহাগাড়া, (১৩) আজীবন সদস্য- চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাজকল্যাণ ফেডারেশন, (১৪) আজীবন সদস্য- চট্টগ্রাম সমাজকল্যাণ পরিষদ, ১৫) দাতা- হযরত খাদিজাতুল কোবরা (রা.) বালিকা এতিমখানা, পূর্ব বড় ভেওলা, চকরিয়া।
- প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন সাধন : মরহুম হুজুরের প্রতিষ্ঠিত প্রত্যেক বায়তুশ শরফ মসজিদের উন্নয়ন ও নতুন মসজিদ প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং অনেকগুলো এতিমখানা ও হিফজখানা, মাদরাসা, দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মাসিক দ্বীন-দুনিয়ার পাশাপাশি শিশু-কিশোর দ্বীন-দুনিয়া প্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন।
- অমর কীর্তি : এ পর্যন্ত অনেকগুলো মসজিদ ও মাসরাসা নির্মাণ করেছেন।
- সেমিনার আয়োজন :
- ১. সীরাত সাহিত্যের বিকাশ ধারা, ১৯৯৮,
- ২. আধুনিকতা উত্তরকালে সূফিবাদ অনুশীলন, একটি সমীক্ষা,
- ৩. মুজাদ্দি আলফে সানীর আধ্যাত্মিকতা ‘ওয়াহ্দতুশ শুহুদ’ বা প্রকাশ মূলে একত্ববাদ।
- ৪. ‘আবদুর রহমান জামী রাহ. ও তাঁর কাব্যে না’ত সাহিত্য সহ আরো অনেক সেমিনার হয়েছে যেগুলোর রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
- আর্তমানবতার পাশে : ১৯৯৮ সালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে, ২০০০ সালে সাতক্ষীরায় বন্যা দুর্গতদের মাঝে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করেন। ২০০৪ সালে ঢাকার কাঁচপুর, ধামরাইয়ে, বাড্ডা সাঁতারকুল বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। ২০০৭ সালের ‘সিডর’ ও ২০০৮ সালের ‘আইলায়’ আক্রান্ত পটুয়াখালীর বরগুনায়, খুলনা-বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চলে লক্ষ লক্ষ টাকার ত্রাণ সামগ্রী খুলনা শাখা আনজুমনে ইত্তেহাদের মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কে হুজুর কেবলা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
- ঐতিহাসিক দোয়া-মুনাজাত : ঈছালে ছওয়াব মাহফিল, আখতরাবাদ (কুমিরাঘোনা, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম)। ঈছালে ছওয়াব মাহফিল কক্সবাজার। শবে বরাত, ও শবে ক্বদরের ঐতিহাসিক মুনাজাত করেন।
- আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের সাথে সাক্ষাৎ :
- যাদের সাথে ছিল তাঁর আন্তরিক বিশেষ হৃদ্যতা : সৈয়দ আব্দুল আহাদ আল-মাদানী (রাহ.), গারাঙ্গিয়ার বড় হুজুর শাহ্সূফী হযরত মাওলানা আব্দুল মজীদ, ছোট হুজুর হযরত মাওলানা আব্দুর রশীদ (রাহ.), মাসিক মদীনার সম্পাদক আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হযরত মাওলানা মুহীউদ্দীন খান (রাহ.), হযরত মাওলানা মোহাম্মদ সুলতান যওক নদভী, এস.আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইফুল আলম মাসুদ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লি. এর চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব আবদুস সামাদ লাবু, আই এম এস গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব আবুল বশর আবু।
- পুস্তক রচনা ও অনুবাদ : বিভিন্ন বই পাঁচটি। প্রায় এক হাজারের উর্ধ্বে কবিতা নিয়ে তাঁর কালজয়ি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
- পবিত্র হজ্ব পালন ও ওমরা পালন : ৫০ বার এর অধিক হজ্ব ও ২০ বারের অধিক ওমরা পালন করেন।
- যিয়ারত : ১৯৮০, ১৯৯৮ সালে বাগদাদ শরীফ যিয়ারত করেন, আজমীর শরীফ সফর করেন। এছাড়াও বাংলাদেশ সহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন আউলিয়া কিরামের মাযার যিয়ারত করেন।
- বিদেশ সফর : ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ইরাক, জর্ডান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
- সংস্কার কার্যক্রম : শাহ্ পীর আউলিয়ার মাজার, বাগেরহাট হযরত খান জাহান আলী (রাহ.)-এর মাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদ, জবলে সীরত সহ বিভিন্ন জায়গায় অদ্যাবধি সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
- প্রতিবাদ-প্রতিরোধ : কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী, রাষ্ট্রীয় নিরাত্তা বিরোধী যাবতীয় অনৈতিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সব সময় তিনি সোচ্চার।
- ব্যাংকের শরীয়াহ্ বোর্ড চেয়ারম্যান : ইসলামী ব্যাংক শরীয়াহ্ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ২০০৮ইং এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন—-।
- প্রিয় সখ : এতিম ও হাফেজদের লালন-পালন, অধ্যয়ন, কবিতা লেখা, নাত গযল পরিবেশন করা, ওয়াজ করা।
- প্রিয় গ্রন্থ : মসনবী শরীফ, মিশকাত শরীফ।