
বায়তুশ শরফের পবিত্র কবরগাহে শাহ কুতুব উদ্দীন (রহ.)
চট্টগ্রামের আধ্যাত্মিক ইতিহাসে বায়তুশ শরফ শুধু একটি খানকাহ নয়; এটি একটি নূরের দিগন্ত। আর সেই দিগন্তের নীরব প্রান্তরে, শান্ত নির্জনতায় শুয়ে আছেন ইসলামের দুই মহান সাধক—হযরত শাহ আব্দুল জব্বার (রহ.) এবং তাঁর প্রিয় শাগরেদ ও উত্তরসূরি হযরত শাহ কুতুব উদ্দীন (রহ.)।
পাশাপাশি দুটি সমাধি
এখানে কেবল দুটি সমাধি। একদিকে পীর–মুর্শিদের কবর, অন্যদিকে তাঁর আজীবনের খলিফা ও শাগরেদ। দু’জনের সমাধি পাশাপাশি যেন জীবন্ত প্রতীক হয়ে আছে গুরু ও শিষ্যের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের। দুনিয়ার মতো আখিরাতেও তাঁদের এই সান্নিধ্য অব্যাহত।
হাদিয়ে যমান হযরত মাওলানা শাহসূফি আব্দুল জব্বার (রহ.)
তিনি ছিলেন বায়তুশ শরফের আধ্যাত্মিক উত্থানের প্রবর্তক হযরতে আলা হযরত শাহসূফি মীর মুহাম্মদ আখতর রহ এর খলিফা। যিনি দ্বীনের দাওয়াত ও খালিস ইলমের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে এনেছেন।
শাহ কুতুব উদ্দীন (রহ.)
তিনি ছিলেন তাঁর খলিফা, প্রিয় শাগরেদ ও উত্তরসূরি। ওজস্বী কণ্ঠে ওয়াজের ময়দানে কোটি মানুষের হৃদয় আন্দোলিত করেছেন। ইসলামের দাওয়াতকে করেছেন সহজবোধ্য, প্রাণবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী। গাউছে পাক হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রহ. প্রবর্তিত কাদেরীয়া তরীকার প্রসারে আজীবন কাজ করে গেছেন। মানুষের দিলে গাউছে পাকের মহব্বতের বীজ রোপন করেছেন।
জিয়ারতের ধারা
এই পবিত্র কবরগাহে প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অবিরাম মানুষের পদচারণা।
- কেউ আসে সালাম দিতে,
- কেউ আসে দোয়া করতে,
- কেউ অশ্রুসিক্ত চোখে ফাতেহা পাঠ করে,
- কেউ আসে চোখ ভিজিয়ে নিতে,
- আবার কেউ আসে আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজতে।
- কেউ নীরবে সালাম দেয়,
- কেউ আবার নিজের দুঃখ-কষ্টের কথা খুলে বলে মহান আল্লাহর কাছে।
এই কবরগাহে প্রবেশ করলেই হৃদয়ে প্রশান্তি নামে। মনে হয়, বাতাসে ভাসছে যিকিরের সুর, চারপাশে ছড়িয়ে আছে আধ্যাত্মিকতার আলো।
আধ্যাত্মিক আবহ
কবরগাহের বাতাস যেন ভিন্ন ধরনের। সেখানে গেলে মনে হয়—
- হৃদয়ে প্রশান্তি নেমে আসে,
- দুনিয়ার অশান্তি মিলিয়ে যায়,
- আত্মা যেন নতুন আলো খুঁজে পায়।
শাহ কুতুব উদ্দীনের কবরে ফুল ছিটিয়ে, ফাতেহা পড়ে মানুষ ফিরে যায় আলোকিত হৃদয় নিয়ে।
জীবন্ত নিদর্শন
বায়তুশ শরফের এই কবরগাহ আজও বলে দেয়—
- আধ্যাত্মিকতার আলো নিভে যায় না,
- ওলী–আউলিয়াদের উত্তরাধিকার কখনো মুছে যায় না,
- তাঁদের কবরগাহ হয়ে ওঠে মানুষের জিকির ও ইবাদতের কেন্দ্র।
স্মৃতি ও উত্তরাধিকার
শাহ কুতুব উদ্দীনের সমাধিস্থল শুধু একটি কবর নয়; এটি হলো আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস, ইলম ও ইরফানের বাতিঘর, আর আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের স্মরণ করার এক অমূল্য কেন্দ্র।
- হযরত শাহ আব্দুল জব্বার (রহ.) – বায়তুশ শরফের আধ্যাত্মিক অগ্রদূত,
- হযরত শাহ কুতুব উদ্দীন (রহ.) – তাঁর খলিফা, শাগরেদ ও দ্বীনি দাওয়াতের অক্লান্ত সৈনিক।
- শাহ আব্দুল জব্বার (রহ.) ছিলেন আধ্যাত্মিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র, আর শাহ কুতুব উদ্দীন (রহ.) ছিলেন তাঁর আলো বিকশিত করার দীপ্ত বাতিঘর। তাঁদের পাশাপাশি সমাধি আজও সাক্ষ্য দেয়—
“আল্লাহর প্রিয় বান্দারা মৃত্যুর পরও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকেন।”
✨ তাই বলা যায়—
বায়তুশ শরফের কবরগাহ কেবল একটি সমাধিস্থল নয়; এটি হলো স্মৃতির পবিত্র প্রাঙ্গণ, আধ্যাত্মিক শান্তির নীড় এবং লক্ষ মানুষের দোয়ার মিলনমেলা।

Leave a Reply