দিকভ্রান্ত জাতির দিকপ্রদর্শক

কোন কোন মানুষের জন্ম জগৎবাসীর কল্যাণের জন্য। কোন কোন মানুষের জন্ম যুগের পরিবর্তনের জন্য। আবার কোন কোন মানুষের জন্ম মানবতার মুক্তির জন্য।

বায়তুশ শরফের বর্তমান পীর ছাহেব, বাহ্রুল উলূম আলহাজ্ব হযরত শাহ্সূফী মাওলানা মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন ছাহেব (রহ.) এমন একজন শীর্ষ শ্রেণীর মানুষ যিনি সমকালীন মানবের আত্মার সংশোধন বা তায্কীয়া-এ-নফ্স এর মিশনকে এগিয়ে নেয়ার পবিত্র কর্মে ব্যাপৃত। তিনি তরীকতে আলীয়ায়ে কাদেরীয়ার প্রদর্শিত পথে তাঁর কর্মকুশলতার মাধ্যমে পাপ-পঙ্কিলতাদুষ্ট মানুষের হৃদয়ের জমাট অন্ধকার দূরিভূত করার সুমহান ব্রত নিয়ে অগ্রসরমান। সুবচন দিয়ে, সুপরামর্শ দিয়ে, যিকির-আযকার অনুশীলনের ব্যবস্থা করে, সুশীল-সুশোভন হিদায়তী ভাষণ দিয়ে পথহারা মানুষকে সৎপথের সন্ধান দিতে সদা সচেষ্ট। অসহায় নিপীড়িত মানুষের দুয়ারে দান-দক্ষীণার হস্ত সুপ্রশস্ত করে তাদের দুঃখ মোচনে সক্রিয়। একবিংশ শতাব্দীর এ ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ ধরনীতে তাঁর মত আধ্যাত্মিক অনুশীলনের রাহবার এ জাতির জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু তা‘আলার এক অপার করুণা।
শাহ্ মাওলানা মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন ছাহেবের এ অর্জন একদিনে সম্ভব হয়নি। তিনি দিকভ্রান্ত জাতির দিকপ্রদর্শনের হাল ধরার জন্য নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন দু’জন আল্লাহর অলির পদপ্রান্তে।

একজন বায়তুশ শরফের প্রাণ-প্রতিষ্ঠাতা কুতুবুল আলম হযরত শাহ্ সূফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মীর মোহাম্মদ আখতর ছাহেব (রাহ.) ও অন্যজন হাদিয়ে যামান শাহ্ সূফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল জব্বার ছাহেব (রাহ.)। সুদীর্ঘ ৪০ বৎসর নিঃশর্তভাবে স্বীয় পীর ছাহেব দ্বয়ের আনুগত্য ও অনুসরণের মাধ্যমে তিনি নিজেকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন।

তাঁদের ইন্তিকালে আজ বায়তুশ শরফের মত সুবিশাল দরবারের তিনি কর্ণধার। একটি মসজিদ-ভিত্তিক, আধ্যাত্মিক, অরাজনৈতিক, মানবকল্যাণমূলক সোসাইটিজ এ্যাক্ট-এ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় পর্যায়ে নিবন্ধনকৃত সংগঠন ‘বায়তুশ শরফ আন্জুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ’-এর সম্মানিত সভাপতি। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারাবদ্ধ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড’ এবং নব প্রতিষ্ঠিত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লি.-এর শরীয়াহ কাউন্সিলের মাননীয় চেয়ারম্যান।

শাহ মাওলানা মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন ছাহেবের এই ঈর্ষণীয় উন্নতির পেছনে লক্ষণীয় যে, তিনি যোগ্যতাও অর্জন করেছেন আবাল্য কঠোর সাধনায়। ঐতিহ্যবাহী চুনতী হাকিমিয়া আলীয়া মাদরাসা হতে ১৯৫৩ সালে দাখিল- ২য় বিভাগ ও ১৯৫৫ সালে আলিম- ১ম বিভাগ (মেধা তালিকায় ১৫শতম স্থান) এবং ১৯৫৭ সালে ফাজিল- ১ম বিভাগ (মেধা তালিকায় ৫মতম স্থান) এবং শতাব্দীর প্রাচীন দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম আলীয়া মাদরাসা হতে ১৯৫৯ সালে কামিল ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অর্জন করে ‘ইস্ট পাকিস্তান মাদরাসা এডুকেশন বোর্ড’ কর্তৃক প্রদত্ত ‘গোল্ড মেডেল’ লাভ করেন। শুধু ছাত্র জীবনের সফলতার পেছনে তিনি ছোটেননি। খেদমত করেছেন, সবক নিয়েছেন স্বীয় পীর ছাহেবের কাছ থেকে কিশোর বয়স (৮ম শ্রেণী) হতে। এরপর শুধু এগিয়ে চলা সম্মুখ পানে।

১৯৫৯ সাল হতে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সাতকানিয়ার রাসূলাবাদ সিনিয়র মাদরাসায় সুপার পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৮৯ সাল হতে ২০০৩ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ বছর উপাধ্যক্ষ ও অধ্যক্ষ হিসেবে অত্যন্ত সফলতার সাথে বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসার ছাত্রদের পাঠদান ও প্রশাসন পরিচালনা করেছেন। শিক্ষকবৃন্দ তাঁকে দিয়েছেন অকৃত্রিম অব্যাহত সহযোগিতা। ফলে স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান (অধ্যক্ষ)’ -এর ‘জাতীয় পুরস্কার’। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং ২০০০ সালে তাঁকে ‘স্বর্ণ পদকে’ ভূষিত করেন। প্রদান করেন অমূল্য সনদপত্র ও পুরস্কার স্বরূপ নগদ অর্থের চেক। সাথে সাথে আদর্শ মাদ্রাসাও ২য় বার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হয়।
অধ্যক্ষ মহোদয়ের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করার পর মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের (গভর্নিংবডির) সম্মানিত সহ-সভাপতি হিসেবে একাডেমিক কার্যক্রম (কামিল শ্রেণীর ছাত্রদের পাঠদান) সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার পাশাপাশি তিনি মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়নেও বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন।
মাদসারা সরকারি শিক্ষকতার পদ থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি ২০১৫ইং সাল পর্যন্ত কামিল শ্রেণীর ছাত্রদের বুখারী শরীফ এবং নসাঈ শরীফের পাঠদান অব্যাহত রাখেন। এরপর দরবারের তরীকতের কাজে ব্যস্ততা ও শারীরিক দুর্বলতা, অসুস্থতার কারণে আর পাঠদান সম্ভব হয়নি।
১৯৯৮ সালের ২৫ মার্চ হাদিয়ে যামান (যুগের সংস্কারক) শাহ সূফী হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার ছাহেব (রাহ.)-এর ইন্তেকালের পর এ বিশাল দরবারের দায়িত্বভার তাঁর স্কন্ধে অর্পিত হয়। তিনি তা দৃঢ় আস্থার সাথে ধারণ করেন। পীর-মুর্শীদের পদাঙ্ক অনুসরণে তাঁর পরিচালিত কর্মসূচীকে এগিয়ে নিতে, অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করতে এবং নতুন নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বায়তুশ শরফের সুনামকে দিন দিন প্রবৃদ্ধি করছেন। বায়তুশ শরফ আনজুমনে ইত্তেহাদের কর্মকান্ডকে সুপ্রশস্ত ও গতিশীল করছেন। তাঁর চিন্তা-চেতনায় দিবানিশী কাম্য বায়তুশ শরফের সমৃদ্ধি।
হুজুর কেবলা (রাহ.) বাংলার মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমান তাজা রাখার জন্য যে নতুন নতুন সংস্কারমূলক কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন তাঁর ওফাতের পর বর্তমান হুজুর কেবলা (ম.জি.আ.) তা অব্যাহত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে এসব কর্মসূচীর আকার-আয়তন ও বিশালতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অধিক সংখ্যক লোক এ থেকে উপকৃত হচ্ছে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মরহুম হুজুর কেবলা প্রবর্তিত তিনদিন ব্যাপী মীলাদুন্নবী মাহফিলকে চারদিনে উন্নীত করণ। এবং অদ্যাবধি চারদিন ব্যাপী পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (স.) উদ্যাপন হচ্ছে। পাখপাখালির আসর, শানে মোস্তফা (স.), গুণিজন সংবর্ধনা এবং ১২ই রবিউল আওয়াল আযীমুশ্শান মীলাদুন্নবী মাহফিলের গুণগত মানোন্নয়ন করেছেন। অনুরূপভাবে শাহ্ পীর আওলিয়ার মাযার, জবলে সীরাত, বাগেরহাট ষাট গম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে ৩দিন ব্যাপী সীরাতুন্নবী (স.) মাহফিল, ঢাকা বায়তুশ শরফ মসজিদের ব্যাপক উন্নয়ন ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান পূর্বের তুলনায় আরো সমৃদ্ধ এবং ফলপ্রসূভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।
ভক্তবৃন্দের হৃদয় উজাড় সহযোগিতা, ভক্তিপূর্ণ আনুগত্য, নির্দেশ পালনে স্বতঃস্ফূর্ততা ও আর্থিক অনুদানে বৃহত্তর কক্সবাজার অঞ্চল, খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চল, পাবনা, রাজশাহী-বগুড়া-দিনাজপুর তথা উত্তরবঙ্গে বায়তুশ শরফের অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও হেফজখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ভক্তবৃন্দের আত্মসংশোধন ও আত্মোন্নয়নের লক্ষ্যে পীর ছাহেব কেবলার একক পরিচালনায় ও প্রশিক্ষণে অনুষ্ঠিত (২৪-২৯শে জুলাই ২০০৪ইং) তরীকতে আলিয়ায়ে কাদেরীয়ার “তালিমী সপ্তাহের” আশাতীত সাফল্য সবার মুখেমুখে। নতুন প্রজন্মের ভক্ত-অনুরক্ত ও শিক্ষার্থীগণ হুজুরের নিকট তালিমী সপ্তাহ পুনরায় অনুষ্ঠানের জন্য বার বার অনুরোধ করছেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে —- দ্বীতিয়বার ৩দিন ব্যাপী তা’লিমী সপ্তাহের আয়োজন করেন।
অবশ্য এ ক্ষেত্রে একটি কথা না বললে নয়; আমাদের এতগুলো সাফল্যের মধ্যেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে বায়তুশ শরফ ইসলামী গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও গবেষণা কর্ম পিছিয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ডক্টর, প্রফেসর ও গবেষকগণ পুনরায় ইসলামী গবেষণা কেন্দ্রকে সচল দেখতে আগ্রহী। এদিকে অনেক বৎসর যাবত অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও ঐতিহ্যমন্ডিত বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। এ অবস্থায় পরম শ্রদ্ধাভাজন হুজুর কেবলা (ম.জি.আ.) একটু সুনযর দিলেই অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে অনেকের আশা।
আল্লাহ্ পাক সুব্হানুহু তাআলার অশেষ মেহেরবানীতে শত ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর চিন্তাশীল অন্তর গবেষণায় রত। তাঁর একক রচনায় প্রথম গ্রন্থ ‘জান্নাতী ও জাহান্নামী যারা’ পাঠক নন্দিত হয়েছে। হযরত কেবলা ও হুজুর কেবলা (রাহ.)-এর সান্নিধ্যে থেকে রচিত কিতাব ‘বেশারতুল ইখওয়ান ফি খাওয়াচ্ছিল কুরআন’, ‘দোয়ায়ে মুসতাজাবুদ্ দাওয়াত’, ‘কাশেফে হাজাত’ প্রভৃতি কিতাব-পত্র উম্মতে মুহাম্মদী (স.)-এর হিদায়তের নজরানা। সদ্য প্রকাশিত ‘কিতাব ও সুন্নাহ্ র আলোকে তরীকতের মূলনীতি’ কিতাবটি তরীকতপন্থী ভাইদের তরীকতের দিকনির্দেশনায় সঠিক পথ প্রদর্শনে সক্ষম হবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রকাশিত হয়েছে সপ্তাহ্ব্যাপী তরীকতের মুবাল্লিগদের উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষণকালীন প্রদত্ত তাঁর ভাষণ “তা’লিমী সপ্তাহে হুজুর কেবলা (ম.জি.আ.)-এর ভাষণ।”

এ মহান অলী-এ-কামেল ১৯৪২ সালের ১লা জানুয়ারী চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আধুনগরস্থ সূফী মিয়াজী পাড়ায় বাবা মাওলানা মোছলেহ্উদ্দিন (রাহ.) ও মা রায়হানা বেগম (রাহ.)-এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবের শিক্ষা পেয়েছেন মহান ও মহিয়ষী পিতা-মাতার স্নেহের পরশে। তাঁর পিতা ছিলেন ঐতিহ্যবাহী চুনতী হাকিমিয়া আলিয়া মাদ্রাসার সুযোগ্য শিক্ষক আর মহিয়সী মাতাও ছিলেন শিক্ষিতা।

কাবা কেন্দ্রিক জীবন গঠনের অনন্য প্রতীক মাওলানা কুতুবউদ্দিন ছাহেব ১৯৬৫ সাল হতে (দু’একবার ছাড়া) ৫০ (পঞ্চাশ) বারেরও অধিক পবিত্র হজ্ব ও ওমরাহ্ পালন করেছেন। এ হজ্ব পালনে তাঁর প্রধান লক্ষ্য অবশ্যই হজ্বের হুকুম-আহকাম পালন সমাপ্ত করে রাসূলে করীম (স.)-এর পবিত্র রাওজা মোবারক যিয়ারত ও মসজিদে নববীতে ৪০ ওয়াক্ত ফরয নামায জামায়াতের সাথে আদায়। পাশাপাশি আর একটি উদ্দেশ্য তাঁকে সবসময় হজ্ব ও ওমরায় যেতে উদ্বুদ্ধ করে এজন্য যে, তাঁর পীর ছাহেব- বায়তুশ শরফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত কেবলা (রাহ.) এর কবর যিয়ারত। ১৯৭১ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী হযরত কেবলা জীবনের ২৯তম হজ্বব্রত পালন শেষে মিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁকে মক্কায় পবিত্র জান্নাতুল মুয়াল্লায় সমাহিত করা হয়। প্রতি বছর শাহ মাওলানা মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন  তাঁর হজ্ব সফরসঙ্গীদের সাথে নিয়ে জান্নাতুল মুয়াল্লায় হযরত কেবলা (রাহ.)-এর কবরের পাশে দাঁড়ান। দোয়া-দরূদ শেষে দীর্ঘ মুনাজাত পরিচালনা করেন। হজ্জের পর মক্কায় প্রতিবছর হযরত কেবলার (রাহ.) ঈসালে ছাওয়াব মাহফিল করেন। যা তাঁর মরহুম পীর হযরত মাওলানা আব্দুল জব্বার ছাহেব (রাহ.)ও তাঁর জীবনে ৩৩তম হজ্বব্রত পালনকালীন (১৯৭২-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত) প্রতি বছর করে এসেছিলেন।

তাঁর প্রতি বছর হজ্বের আরো একটি উদ্দেশ্য হলো, সম্মানিত হাজী ছাহেবান যারা মহান আল্লাহ্ পাকের মেহমান তাদের নিঃস্বার্থ খেদমত করে অশেষ নেকী হাছিল করা। অবশ্য মানুষের খেদমত করাকে তিনি নিজের জীবনের অন্যতম ব্রত হিসেবে নিয়েছেন ।
এই মহতী তথ্য হতে বায়তুশ শরফের পীর ছাহেবগণ কেন প্রতিবছর হজ্বে গমন করেন- ছিদ্রান্বেষী লোকদের এ অবান্তর প্রশ্নের অবসান হবে।
শুধু চোখ জুড়ানোর জন্য নয়, নয় কোন অন্য উদ্দেশ্য, বায়তুশ শরফের মহামান্য পীর হযরত শাহ মাওলানা মোহাম্মদ কুতুবউদ্দিন ছাহেব (ম.জি.আ.) শুধুমাত্র তরীকতের পরিব্যাপ্তি ও সাংগঠনিক কাজে ইতোমধ্যে সফর করেছেন ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইরাক, জর্ডান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদী আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

স্বভাব কবি বায়তুশ শরফের পীর ছাহেব। ইতোমধ্যে তাঁর লিখিত ও প্রকাশিত সহস্রাধিক উর্দূ কবিতার এক বিশাল ভাণ্ডার তৈরী হয়েছে। আশা করছি তা গ্রন্থাকারে অচিরেই প্রকাশিত হবে।
একজন সুবক্তা, ওয়ায়েয হিসেবে বিগত পঞ্চাশ বছর চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশে হযরত মাওলানা কুতুবউদ্দিন ছাহেব একনামে সুপরিচিত। তাঁর হাজার হাজার ছাত্র স্থানীয় ও জাতীয়, সরকারী ও বেসরকারী নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত। একজন আলোকিত মানুষ হিসেবে তাঁর শিষ্যরাও জাতির মুখ আলোকিত করছেন। এটি তাঁর জীবনের বিরাট সাফল্য। তাঁর প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও প্রত্যুৎপন্নমতিতার ফলে বায়তুশ শরফের কার্যক্রম সুবিস্তৃত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। হুজুর কেবলা (রাহ.)-এর ইন্তিকালের পর এ পর্যন্ত ৬০টির বেশী মসজিদ বায়তুশ শরফ এবং ডজনখানেক মাদরাসা ও এতিমখানা তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আরও বেশকটি প্রতিষ্ঠার পথে।
হযরত কেবলা ও হুজুর কেবলা (রাহ.)-এর মকবুল মুনাজাতে সর্বস্তরের মানুষ যেমন ছুটে যেতেন; আলহাম্দুলিল্লাহ্ আমাদের বর্তমান পীর ছাহেবের পবিত্র যবানে উচ্চারিত মুনাজাতে শরীক হবার লক্ষ্যে শত-সহস্র মানুষ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় মসজিদ বায়তুশ শরফে আয়োজিত ‘শবে বরাত’, ‘শবে কদর’ ও ‘আখতরাবাদে (কুমিরাঘোনা)’ এবং কক্সবাজারের ফাতেহায়ে ইয়াজদাহুমসহ বার্ষিক ঈছালে ছাওয়াব মাহফিলে ছুটে আসেন। তাঁর প্রতি মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা প্রত্যক্ষ করে আশিক মনে ভালবাসার পুস্প প্রস্ফুটিত হয়। তাঁর হাতে তাওবা ও বায়আত হয়ে মানুষ স্বর্গীয় শান্তি লাভ করে।
প্রশাসন, শাসন ছাড়া চলে না; চলেনা একটি আদর্শ পরিবারও। নরমে-গরমেই এই সংসার, এই জগত। আর তায্কিয়ায়ে নফ্সের জন্য প্রয়োজন অধিকতর কঠোরতা, রিয়াযত-মুজাহাদা। যেমন ছিলেন হযরত কেবলা (রাহ.) তাঁর মুরীদদের প্রতি। তিনি কঠিন শাসন-প্রশাসন এবং পুনরায় আদর স্নেহের মাধ্যমে একদল একনিষ্ঠ খাদেম তৈরি করেছিলেন। যাদের বদান্যতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই সুবিশাল বায়তুশ শরফ।
হুজুর কেবলা (ম.জি.আ.) পেয়েছেন হযরত কেবলা (রা.)-এর সেই পবিত্র গুণের কিছু অংশ। সদা হাস্য মুখে থাকলেও মাঝে মাঝে ভক্ত-মুরীদগণের সংশোধন ও আত্মোন্নয়নের জন্য বকাবকি করেন, রাগ প্রদর্শন করেন। এটি একেবারেই ক্ষণিকের জন্য। যে সবরের সাথে পীর মুর্শীদের বকাঝকা সহ্য করতে পারেন সেই সৌভাগ্য লাভে ধন্য হন। হুজুর তো রোগ বুঝেই ঔষধ দেন। রোগী যেমন তার চিকিৎসাও তেমন।
স্রষ্টার অশেষ করুণায় ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে তিনি একজন সফল ব্যক্তি। ১ পুত্র ও ৬ কন্যার জনক তিনি। পুত্র-কন্যারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ও নাতী-নাতনীর প্রতি অত্যন্ত দরদী পীর ছাহেব সব সময় আত্মীয়-স্বজনকে স্মরণে রাখেন। প্রতিবেশীগণও তাঁর দয়া দাক্ষিণ্য হতে বাদ পড়েন না। আলেম-ওলামা, ছাত্র-শিক্ষক, ইমাম-মুয়াজ্জিন, ফকীর-মিসকীন, অসহায় বিধবা, অনাথ এতীম, কন্যাদায়গ্রস্থ পিতার প্রতি, এককথায় সর্বসাধারণের প্রতি জনাব হুজুর কেবলার দয়া ও দানের হস্ত সদা প্রসারিত। সাহায্যপ্রার্থীকে সাধারণত বিমুখ করতে তাঁকে দেখা যায় না।
মহান আল্লাহ্র দরবারে আকুল প্রার্থনা তিনি যেন এতিম-অসহায়, দ্বীন ও তরীকতের এ একনিষ্ঠ খাদেমকে সুস্থ, সমৃদ্ধ, সুদীর্ঘ জীবন দান করেন। আমীন।

(লেখক : মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ্
সম্পাদক, মাসিক দ্বীন-দুনিয়া)


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *